রমজানের শেষ শুক্রবার বিশ্ব আল কুদস দিবস। মুসলমানের প্রথম কেবলা হাতছাড়া হওয়ার করুণ ট্রাজেডির কথা স্মরণ করে প্রতি বছর দিনটি পালিত হয়। একই সঙ্গে রমজানের শেষ শুক্রবার হিসেবে এ দিনটি জুমাতুল বিদা হিসেবেও দেশব্যাপি পালিত হচ্ছে। পবিত্র রমজান মাসের শেষ শুক্রবার হিসেবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ দিনটিতে জুমার নামাজ আদায়সহ
বিভিন্ন ইবাদত আমল করে থাকেন।
জেরুজালেম নগরী বিশ্বের পবিত্রতম স্থান। সব ধর্ম-বর্ণ জাতি-গোষ্ঠীর মানুষ একে শ্রদ্ধা করে থাকেন। এক হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন ‘বায়তুল মাকদিসে এক রাকাত নামাজ পড়লে পঞ্চাশ হাজার রাকাত নামাজের সওয়াব হয়।’ কিন্তু আফসোসের কথা হচ্ছে, মুসলমানরা আজ সেই সওয়াব থেকে বঞ্চিত। বায়তুল মোকাদ্দাস ও জেরুজালেম নগরীতে আজ মুসলমানদের বিচরণ নিষিদ্ধ। নিজেদের পবিত্রস্থানে যেতেও তারা আজ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য পর্যন্ত সেখানে যাওয়া নিয়ন্ত্রিত। অভিশপ্ত ইহুদিরা জবরদখল করে আছে সেই স্থানটির। বছরের পর বছর ধরে তারা সেখানে মুসলমানের যাতায়াত নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। হাজার বছরের মুসলিম ঐতিহ্যমণ্ডিত এ নগরীতে মুসলমানরাই আজ নিগৃহীত। উপরন্তু ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি বর্বরতার সব মাত্রা পেরিয়ে গেছে। অথচ অবৈধ ও অনৈতিকভাবে উড়ে এসে জুড়ে বসা ইহুদিরা সেখানে বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কর্তৃত্ব। শুধু ফিলিস্তিনবাসীর জন্যই নয়, সমগ্র মুসলিম মিল্লাতের জন্য এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক ট্র্যাজেডি।
ফিলিস্তিন আয়তনগত দিক থেকে তেমন বড় রাষ্ট্র নয়। এর মোট আয়তন মাত্র ২৭ হাজার বর্গকিলোমিটার। কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে এর গুরুত্ব অপরিসীম। ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমান-তিন ধর্মের লোকের কাছেই ফিলিস্তিন পুণ্যভূমি হিসেবে গণ্য। বিগত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা যাযাবর জাতি ইহুদিদের একটি স্থানে জড়ো করার দাবি উঠে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন এ ব্যাপারে জোর তৎপরতা চালায়। সে সময় মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের ভেতর লুকিয়ে থাকা হীন কূট চালানোর জন্য মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদিদের পুনর্বাসন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সে লক্ষ্যে তারা নিজেদের প্রত্যক্ষ মদদে মধ্যপ্রাচ্যের নোলক ফিলিস্তিন নগরীতে ইহুদিদের এনে জড়ো করে। একটি স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করে। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্নে তারা আজ বিভোর। কিন্তু তাদের সেই আশা দিন দিন দুরাশায় ঘনীভূত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদীদের সূক্ষ্ম চালের কারণে ফিলিস্তিন ও মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। সারা বিশ্বের মুসলমানরা আজ তাকিয়ে আছে ফিলিস্তিনের দিকে। কবে মুক্ত হবে আল কুদস। কবে মুসলমানরা আবার তাদের পুণ্যস্থান বায়তুল মাকদিসে স্বাধীনভাবে ইবাদত-বন্দেগি করতে পারবে।
মুসলমানদের সেই আশা পূরণের আপাতত কোনো ঝলক দেখতে পাওয়া না গেলেও নিরাশার কোনো কারণ নেই। হয়ত শিগগির মুসলমানদের মধ্যে জন্ম হবে আরেক সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর। যিনি আবার মুসলমানদের সেই পুণ্যভূমি ফিরিয়ে দেবে মুসলমানদের হাতে। সেই আশা মুসলমানরা করতে পারেন কারণ তাদের জন্য রয়েছে খোদায়ী প্রতিশ্রুতি ‘তোমরা ভেঙে পড়ো না, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ো না, তোমরাই একদিন বিজয়ী হবে যদি তোমরা প্রকৃত মুমিন হয়ে থাক।’ আমরা খোদার দরবারে মিনতি জানাচ্ছি তিনি যেন আমাদের প্রথম কেবলা আবার আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেন।